শিয়রে বিপদ! তাপপ্রবাহ-বন্যা-দাবানলই নিউ নর্মাল

এই সময়: দাবানলের লেলিহান শিখায় জ্বলছে গ্রিস। একই ছবি তুরস্ক, ইতালি রাশিয়া, ক্যালিফোর্নিয়াতেও। সম্প্রতি 'হিট ডোম' (Hit Dome) বা উত্তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল আমেরিকা ও কানাডার একাংশ, যা প্রাণ কেড়েছে সাতশোরও বেশি মানুষের। প্রবল বৃষ্টি-বন্যায় ক'দিন আগেই ধুয়ে-মুছে গিয়েছে জাপানের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল। পৃথিবীর নানা প্রান্ত একই সঙ্গে বিবিধ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি- এ সব কি নিছকই সমাপতন? রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট কিন্তু বলছে, মোটেই না। মানুষের বিধ্বংসী কার্যকলাপে যে ভাবে () বাড়ছে, তাতে এটাই পৃথিবীর নিউ নর্মাল! অর্থাৎ, প্রবল তাপপ্রবাহ, বিধ্বংসী আগুন বা বিপর্যয়কারী বন্যা- যা এতকাল ১০ বা ৫০ বছরে একবার ঘটত, সেই ঘটনাগুলোই এখন ঘটবে বারবার, হয়তো বছরে একাধিকবার! মানুষ এখনই সংযত না-হলে ধ্বংসের আর বেশি বাকি নেই। বিশ্বের প্রতিটি এলাকার জলবায়ু () নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সোমবার ১৯৫টি সদস্য দেশকে নিয়ে বৈঠকে ষষ্ঠ রিপোর্টটি পেশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্র প্যানেল (আইপিসিসি)। আর সেই রিপোর্টের প্রতি পদে পদে বিপদবার্তা! পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ইতিমধ্যেই উষ্ণায়নের প্রভাব বোঝাতে শুরু করে দিয়েছে। অবিলম্বে সব ক'টি দেশ যদি কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং গ্রিন গ্যাস নির্গমনে রাশ টানে, তা হলেও পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে প্রায় ২০-৩০ বছর! আর সমুদ্রের যে জলস্তর ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে, তা কমানোর উপায় নেই, তবে নতুন করে জলস্তর বৃদ্ধি রোখা সম্ভব। কিন্তু সেটাও এখনই সব দেশ একসঙ্গে সচেতন হলে। না-হলে অবিলম্বেই নেমে আসবে বিপর্যয়, যা থেকে কোনও দেশই রক্ষা পাবে না। যা দেখে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তেনিও গুতারেসের উক্তি, 'সমগ্র মানবসভ্যতার জন্য এটা লাল সতর্কবার্তা'! কিন্তু এতেও কি সতর্ক হবে মানুষ? রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, এত বৈঠক, সম্মেলনের পরও দেশগুলি নিজেদের কার্বন নির্গমনে তেমন রাশ টানতে পারেনি বলেই পৃথিবীর তাপমাত্রা হু হু করে চড়ছে। ২০১৮-এর ক্লাইমেট সামিটে বলা হয়েছিল, কার্বন নির্গমনে রাশ না-টানতে পারলে ২০৪০-এর মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ২০৩০-এর মধ্যেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা যাবে! সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির পরিসংখ্যানও ততধিক চিন্তার। ১৯০১-১৯৭১ সাল অবধি প্রতি বছর সমুদ্রের জলতল বাড়ত গড়ে ১.৩ মিলিমিটার, আর ২০০৬ থেকে ২০১৮-এর মধ্যে সেটা বেড়ে হয়েছে বছরে ৩.৭ মিলিমিটার! রাষ্ট্রপুঞ্জের এই রিপোর্টে সতর্কবার্তা রয়েছে ভারতের জন্যও। রিপোর্ট বলছে, উষ্ণায়নের জেরে দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন বৃষ্টি বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, সেই বৃষ্টির পূর্বাভাস ঠিক ভাবে দেওয়া সব সময় সম্ভব হবে না। বদলে যেতে পারে বর্ষার চরিত্রও। সেই সঙ্গে হিমালয়ে বরফের গলন বাড়বে, যার প্রভাবে হতে পারে বন্যা। এমনিতে সামগ্রিক ভাবেই ১৯৫০-এর পর থেকে তাপপ্রবাহের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েছে, সেই তুলনায় কমেছে শৈত্যপ্রবাহ। শহরাঞ্চলে জলাশয় আর সবুজের আচ্ছাদন কমছে, বদলে বাড়ছে কংক্রিটের জঙ্গল। আর সেই কংক্রিটের জঙ্গলে উত্তাপ আটকা পড়ে এক একটি শহর হয়ে উঠছে উষ্ণায়নের এক একটি হটস্পট! রিপোর্ট বলছে, এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই সংখ্যায় ও প্রাবল্যে আরও বাড়বে। আর তা একটি অঞ্চলে আটকে না-থেকে ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তে! বাঁচার কি তা হলে কোনও উপায় নেই? রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, এই শতক শেষ হওয়ার আগেই বিশ্ব উষ্ণায়নের গতিকে বেঁধে ফেলা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রতিটি দেশকে বিপুল ভাবে কার্বন ও গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমাতে হবে। চলতি বছরের শেষ দিকে গ্লাসগোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলির বৈঠক। সেখানে ১৯৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে ভারতও। প্রতিটি দেশ ব্যাপকহারে নির্গমন কমাতে রাজি হলে খুব দ্রুত এয়ার কোয়ালিটি উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু সব ক'টি দেশকে একমত করার কাজ কি এতটা সহজ হবে? রিপোর্টে লাল সতর্কবার্তা কার্বন নির্গমনে নাশ না-টানায় ব্যাপক হারে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে ২০৩০-এর মধ্যেই শৈত্যপ্রবাহ কমে বাড়ছে তাপপ্রবাহ বেড়েই চলেছে সমুদ্রের জলস্তর সবুজ এবং জলাশয় কমায় শহরগুলি পরিণত হয়েছে উষ্ণায়নের হটস্পটে এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা ও ধ্বংসলীলা বাড়বে একই সঙ্গে এক দেশে বন্যা, অন্য দেশে খরা অস্বাভাবিক নয়


from International News in Bengali, আন্তর্জাতিক News, World News Headlines in Bangla https://ift.tt/3AqmTCo
https://ift.tt/3iz111t
close