অলিম্পিকের আসরে যাদবপুরের প্রাক্তনীও, কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?

এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: টোকিয়ো ()। ভারতের জন্য সবচেয়ে সফল বছর। সোনা, রূপো, ব্রোঞ্জ মেডেল প্রাপকদের পাশাপাশি অলিম্পিকের আসরে অংশ নিয়েছিলেন একাধিক বাঙালি খেলোয়াড়। তবে শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করেছেন বাঙালি বিচারকও। টোকিয়ো অলিম্পিকে প্রতিযোগীতার বিচারক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন ইন্দ্রনীল দত্ত। জাপান থেকে একগুচ্ছ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরেছেন তিনি। কেমন ছিল তাঁর এই অলিম্পিকের জার্নি? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) প্রাক্তনী ইন্দ্রনীল দত্ত (Indranil Datta) গত ১১ বছর ধরে তীরন্দাজির () সঙ্গে যুক্ত। নিজে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি গত ১০ বছর ধরে তিনি এই খেলার বিচারক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন ওয়ার্ল্ড আর্চারির মঞ্চে। এই প্রথম সরাসরি অলিম্পিকের আসরে বিচারক হিসেবে অংশ নিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এই সময় ডিজিটালকে ইন্দ্রনীল বলেন, 'টোকিয়ো অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গেলে হয়ত শব্দ কম পড়ে যাবে। ১০ বছর ধরে আমি তীরন্দাজি প্রতিযোগীতার বিচারক হিসেবে একাধিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি। কিন্তু, এই অনুভূতি সম্পূর্ণ আলাদা। একটা আলাদাই অ্যাড্রিনালিন রাশ ছিল। ফিরে আসার পরও আমার এই জার্নিটা থেকে বেরতে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছে।' কিন্তু, কেমনভাবে এল এই সুবর্ণ সুযোগ? ইন্দ্রনীল বলেন, '২০১৫ সাল থেকে আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে আমি যুক্ত। প্রতিবছরই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক লেভেলে তীরন্দাজি প্রতিযোগীতায় বিচারক কিংবা রেফারি হিসেবে অংশ নিই। ওয়ার্ল্ড আর্চারির পাঁচজন বিচারকের মধ্যে আমিও একজন। সেখানে থেকেই ভারতের হয়ে অলিম্পিকে তীরন্দাজি প্রতিযোগীতার বিচারক হিসেবে সুযোগ পাই। প্রতিবছরের কর্মপদ্ধতি এবং Ranking-এর উপর ভিত্তি করে অলিম্পিকের এই নির্বাচন হয়। জুরি মেম্বার হিসেবে অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলেও টোকিয়োতে যেতে পারব ভাবিনি। এরপর ২০১৯ সালে হঠাৎ করেই বিচারক হওয়ার এই সুযোগ এসে যায়।' অলিম্পিক ভিলেজে থাকার অভিজ্ঞতাও এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন ইন্দ্রনীল দত্ত। তিনি বলেন, 'বাইরের দর্শক হয়ত ছিল না। কিন্তু, দাবি করে বলতে পারি অলিম্পিকের আসর আয়োজনে জাপান তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তীরন্দাজির জন্য সেরা আয়োজন ছিল টোকিয়োতে। সর্বোপরি, কোভিড ম্যানেজমেন্টে অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ অনেক সুদক্ষ ভূমিকা নিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কোভিড টেস্ট, কনট্যাক্ট ট্রেসিং সহ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয়েছে।' এবারের অলিম্পিকে তীরন্দাজির মহিলা বিভাগের গোল্ড মেডেল ম্যাচটিতে বিচারক হিসেবে ছিলেন ইন্দ্রনীল। তাঁর কথায়, 'বিচারকদের সকলেরই ইচ্ছা থাকে গোল্ড মেডেল ম্যাচ পরিচালনা করা। সেই সুযোগও এসে যায় টোকিয়োতে। সকলে হয়ত ভাবেন প্রতিযোগী এবং কোচেদেরই কেবল পরিশ্রম হয়। কিন্তু, এই লেভেলে একটা হাইভোল্টেজ ম্যাচে বিচারকদেরও নার্ভ ধরে রাখতে হয়।' ভারতীয় বিচারক হওয়ায় ভারতের প্রতিযোগীদের ম্যাচে বিচারক হিসেবে থাকতে পারেননি ইন্দ্রনীল। তবে দর্শকাসনে বসে উপভোগ করেছেন বাঙালি তীরন্দাজ অতনু দাস ও দীপিকা কুমারির ম্যাচ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রনীলের মাথায় তীরন্দাজির নেশা চাপল কী করে? তাঁর কথায়, '১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। আমার বাবা ছিলেন তীরন্দাজ কোচ। ২০০৬ সালে দোহা এশিয়ান গেমস এবং ২০১০ সালে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে বাবা কমপিটিশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে রেফারি ছিলেন। মনের মধ্যে একটা জেদ ছিল। বাবা যখন অলিম্পিকে যেতে পেরেছে, তখন আমিও পারব। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে রেফারি হিসেবে আমি অংশ নিই। এরপর ২০০৯ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড আর্চারির অংশ হই।' ইন্দ্রনীলের কথায়, 'খেলাধুলো কেবল মেডেল পাওয়ার জন্য নয়। খেলাধুলো মানুষের চরিত্র তৈরিতেও বড় ভূমিকা পালন করে। টিম স্পিরিট তৈরি করে দেয়। ঐক্যবদ্ধভাবে একে অপরের পাশা থাকা শেখায়। পাশাপাশি, ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের লড়াইয়ের ময়দানে বাউন্স ব্যাক করে ফিরে আসা শেখায়। তাই সরাসরি খেলার সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারলেও নানাভাবে খেলাধুলোকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ এখন অফুরন্ত।'


from Sports News in Bengali, India and World Sports News, Bangla Sports News, ক্রীড়া খবর, Latest Sports News - Eisamay https://ift.tt/3s5V6V1
https://ift.tt/3CAu9xx
close