'মানবাধিকার লঙ্ঘন থানাতেই সব চেয়ে বেশি'

নয়াদিল্লি: বিচারকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব না-দেওয়ার জন্য সিবিআই, আইবি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ক'দিন আগে কড়া ভর্ৎসনা করেছিলেন তিনি। এ বার প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা কাঠগড়ায় তুললেন পুলিশকেও। তাঁর অভিযোগ, ভারতে এখনও পুলিশি হেফাজতে অত্যাচারের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে, আর ভিআইপি-রাও তা থেকে ছাড় পান না! তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধান বিচারপতি যখন এ কথা বলছেন, তার আগে রবিবার ভোররাতে ত্রিপুরায় তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত-সহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোন অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতিক মহলের একাংশ ত্রিপুরার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে চাইছেন। তবে, ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার হওয়া স্ট্যান স্বামীর হেফাজতে মৃত্যু, ভারভারা রাওদের মতো প্রবীণ সমাজকর্মীদের জেলবন্দি রাখা নিয়ে এখনও প্রতিবাদ চলছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। রবিবার 'ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিস অথরিটি'র একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধান বিচারপতি। সেখানে তিনি বলেন, 'মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শারীরিক নির্যাতনের মতো ঘটনা থানাতেই সবচেয়ে বেশি হয়। হেফাজতে অত্যাচার, পুলিশি বর্বরতার মতো সমস্যা এখনও সমাজে রয়েছে। যতই সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার আশ্বাস থাকুক, থানায় ঠিক সময়ে আইনি প্রতিনিধি না-থাকলে গ্রেফতার বা আটক হওয়া ব্যক্তিকে চূড়ান্ত সমস্যার মুখে পড়তে হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় যা সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই স্থির করে দেয় পরবর্তীকালে অভিযুক্ত নিজের স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করতে পারবেন কি না। সাম্প্রতিক রিপোর্টে তো দেখছি, সমাজের নামজাদা মানুষেরাও পুলিশের থার্ড ডিগ্রি অত্যাচার থেকে বাঁচতে পারেন না!' প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে ভীমা কোরেগাঁওয়ের মতো মামলার কথা। উস্কানিমূলক ভাষণের অভিযোগে স্ট্যান স্বামী, ভারভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজের মতো প্রবীণ, নামজাদা একাধিক সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। অসুস্থতার জন্য বার বার তাঁদের জামিনের আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়েছে। পারকিন্সনের রোগী স্ট্যান স্বামী খাওয়ার জন্য একটি সিপার ও স্ট্র চেয়েও বারংবার প্রত্যাখ্যাত হন। জামিনের আবেদন নিয়ে ফয়সালা হওয়ার আগেই গত ৫ জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। স্ট্যান স্বামীর প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের এই আচরণ নিয়ে সোচ্চার হন দেশ-বিদেশের মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁর মৃত্যুকে 'হেফাজতে খুন' বলে সরব হন বিরোধী নেতারা। সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণ পুলিশের উদ্দেশে সতর্কবার্তা বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে, প্রধান বিচারপতি বার বারই ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী এবং প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ফারাক ঘোচানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, 'বিচারব্যবস্থা যদি নাগরিকদের আস্থা অর্জন করতে চায়, তা হলে প্রত্যেক দেশবাসীকে বোঝাতে হবে, ন্যায়বিচার সকলের জন্য। দীর্ঘদিন দেশের প্রান্তিক মানুষ বিচারব্যবস্থার বাইরে থেকেছেন। দেশে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য থাকলেও তার জন্য কোনও মানুষকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আমাদের অতীত যেন ভবিষ্যতের নির্ধারক না হয়। আসুন সকলে জন্য ন্যায়বিচার, সমানাধিকারের স্বপ্ন দেখি।' 'ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিস অথারিটি' তৈরি হয়েছিল ১৯৮৭ সালের 'লিগাল সার্ভিস অথরিটিজ অ্যাক্ট'-এর আওতায়। তাদের লক্ষ্য, সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে বিনামূল্যে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া, লোক-আদালতে ছোটখাটো বিবাদের মীমাংসা করা। তাদের তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই এসেছিলেন প্রধান বিচারপতি। এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গরিব মানুষ আইনি সহায়তা, ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে, গ্রামাঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট সংযোগ ভালোভাবে পৌঁছয়নি। এই ডিজিটাল-বিভেদ দূর করার ডাকও দিয়েছেন বিচারপতি রামানা।


from National News in Bengali, জাতীয় খবর, India News in Bangla, Headlines of India - Eisamay https://ift.tt/3Csg05k
https://ift.tt/3jEV3vk
close